তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

খেজুরের রসের মাধ্যমে রিওভাইরাস (Reo Virus) ছড়াচ্ছে? ০৫ জন শনাক্ত:

খেজুরের রসের মাধ্যমে রিওভাইরাস (Reo Virus) ছড়াচ্ছে? ০৫ জন শনাক্ত:
রিওভাইরাস (Reo Virus) মাইক্রোস্কোপের নিচে এমন- ছবি – BDNEWS24

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পাঁচজনের দেহে রিওভাইরাস (Reo Virus) শনাক্ত করেছে সরকারের Institute of Epidemiology, Disease Control and Research (IEDCR)। এই ভাইরাসটি আগে বাংলাদেশে কখনো শনাক্ত হয়নি। এখনই এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে মহামারি ধরার আশংকা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

রিওভাইরাস (Reo Virus) কী?

রিওভাইরাস (Reo Virus) একটি সংক্রামক ভাইরাস যা সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি শরীরে জ্বর, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফালাইটিস) হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসের নয়টি ধরন শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে চারটি মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া ধরনটি হলো ব্যাট-রিওভাইরাস (Bat-Reo Virus), যা বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। আমাদের টুইটার একাউন্ট

কীভাবে রিওভাইরাস (Reo Virus) ছড়াচ্ছে?

রিওভাইরাস (Reo Virus) প্রধানত হাঁচি-কাশি, বাদুড়ের সংস্পর্শ, এবং দূষিত খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে ছড়ায়।

ছড়ানোর প্রধান উপায়:

  • বাদুড়ের মাধ্যমে সংক্রমণ: বাদুড়ের মুখ লাগানো খেজুরের রস পান করলে বা বাদুড়ে খাওয়া ফল খেলে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
  • মানুষের মাধ্যমে সংক্রমণ: আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি বা ব্যবহার করা জিনিসপত্র থেকেও সংক্রমণ হতে পারে।
  • অপরিষ্কার খাবার বা পানীয়: খাবার ও পানীয় ঢেকে না রাখলে ভাইরাসের ঝুঁকি বাড়ে।

রিওভাইরাস (Reo Virus)-এর উপসর্গ

রিওভাইরাস (Reo Virus)-এ আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

  • সাধারণ উপসর্গ:
  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • বমি
  • গুরুতর উপসর্গ:
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা
  • নিউমোনিয়া
  • মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফালাইটিস)

শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে।

নিপাভাইরাসের সাথে মিল

IEDCR-এর তথ্য অনুযায়ী, রিওভাইরাস (Reo Virus) এবং নিপাভাইরাসের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে।

  • উপসর্গের সাদৃশ্য: উভয় ক্ষেত্রেই জ্বর, মাথাব্যথা এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ হতে পারে।
  • সংক্রমণের উৎস: দুই ভাইরাসই বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।
  • খেজুরের কাঁচা রসের ভূমিকা: নিপাভাইরাসের মতো রিওভাইরাসও খেজুরের কাঁচা রসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

তবে দুই ভাইরাসের প্রকৃতি এবং সংক্রমণের ধরণ ভিন্ন। আরো জানুন: চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী

কেন রিওভাইরাস (Reo Virus) নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি?

রিওভাইরাস (Reo Virus) নতুনভাবে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ায় এটি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

  • মস্তিষ্কের প্রদাহ: বাংলাদেশে অনেক এনকেফালাইটিস রোগীর কারণ অজানা থাকে। রিওভাইরাস (Reo Virus) শনাক্তকরণে এটি আরও পরিষ্কার হতে পারে।
  • নতুন সংক্রমণ ঝুঁকি: ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে এটি মহামারি রূপ নিতে পারে।

রিওভাইরাস (Reo Virus) প্রতিরোধের উপায়

রোগ প্রতিরোধে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকরী নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।

  • খাবার ও পানীয় নিরাপদ রাখা:
  • খেজুরের কাঁচা রস পান থেকে বিরত থাকুন।
  • খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন।
  • পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
  • নিয়মিত হাত ধোয়া।
  • হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই ব্যবহার করা।
  • মাস্ক পরিধান করা:
  • ভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধে মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর।
  • শিশুদের টিকা:
  • রিওভাইরাস (Reo Virus) প্রতিরোধে শিশুদের জন্য বিশেষ টিকা রয়েছে। সময়মতো টিকা দিলে ঝুঁকি কমে।

বাংলাদেশে রিওভাইরাস (Reo Virus) শনাক্ত

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীনের মতে, রিওভাইরাস (Reo Virus) শনাক্তকরণ আরও গবেষণার দরজা খুলে দিয়েছে।

  • কারণ নির্ধারণ: মস্তিষ্কের প্রদাহের অজানা কারণগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হতে পারে।
  • নতুন ভাইরাস শনাক্তকরণ: এভাবে গবেষণা চালিয়ে গেলে অন্যান্য ভাইরাল ইনফেকশন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে।
  • চিকিৎসা উন্নয়ন: সঠিক কারণ জানা থাকলে চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সহজ হবে।

সংক্রমণ এড়ানোর পরামর্শ

  • কাঁচা রস পান করা এড়ান: খেজুরের কাঁচা রস বাদুড়ের মাধ্যমে দূষিত হতে পারে।
  • পাকা ফল খাওয়ার আগে ধুয়ে নিন: পাখি বা বাদুড়ে খাওয়া ফল খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • অপরিষ্কার পরিবেশ এড়িয়ে চলুন: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

উপসংহার

রিওভাইরাস (Reo Virus) সম্পর্কে আরও গবেষণা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাবার এড়িয়ে চলা এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর।

FAQs

  • রিওভাইরাস (Reo Virus) কীভাবে ছড়ায়?
    রিওভাইরাস (Reo Virus) সাধারণত হাঁচি-কাশি, বাদুড়ের সংস্পর্শ, এবং দূষিত খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে ছড়ায়।
  • রিওভাইরাস (Reo Virus)-এর প্রধান উপসর্গ কী?
    জ্বর, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের প্রদাহ।
  • রিওভাইরাস (Reo Virus) প্রতিরোধে কী করা উচিত?
    পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মাস্ক ব্যবহার করা, এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাবার এড়িয়ে চলা।
  • রিওভাইরাস (Reo Virus) কি প্রাণঘাতী হতে পারে?
    গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া বা মস্তিষ্কের প্রদাহ হয়ে প্রাণঘাতী হতে পারে।
  • রিওভাইরাস (Reo Virus)-এর টিকা কি সব বয়সের জন্য প্রযোজ্য?
    সাধারণত শিশুদের জন্য রিওভাইরাস (Reo Virus)-এর টিকা দেওয়া হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *